March 15, 2025, 12:53 am

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
মধ্য মৌসুমেই পড়তে থাকে দাম/ উৎপাদিত সবজির দামে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খরচ উঠছে না প্রান্তিক কৃষকদের প্রফেসর আরেফিন সিদ্দিক আর নেই নির্মম ধর্ষণের শিকার মাগুরার সেই শিশুটি না ফেরার দেশে সামরিক কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বাড়ল আরও ৬০ দিন জামায়াত যুদ্ধাপরাধের সহযোগী ছিল: মাহফুজ আলম যশোরে আলুর ফলন বেড়েছে, কৃষকরা ভাল করেছেন আলু বীজেও নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত মাগুরায় শিশু ধর্ষণ/প্রধান আসামি হিটু শেখ ৭ দিনের রিমান্ডে হত্যা চেষ্টাসহ দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো ইনুকে, কুষ্টিয়া কারাগারে প্রেরণ বাংলাদেশে সরকার বদলালে সম্পর্কে পরিবর্তন আসতে পারে: ভারতীয় সেনাপ্রধান

কুষ্টিয়ার সড়কে বালু নিয়ে ছুটছে অবেধ ট্রলি

জাহিদুজ্জামান/

কুষ্টিয়া শহর এবং শহরতলীর অধিকাংশ সড়কেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে বালুভর্তি যানবাহন। বড় ধরণের ড্রাম ট্রাক (চারিদিকে স্টিলে ঘেরা), সাধারণ ট্রাক ও স্যালোচালিত ট্রলিতে উন্মুক্তভাবে বালু বহন করা হচ্ছে। কুষ্টিয়ার পদ্মা এবং গড়াই নদী থেকে তোলা বালু যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। প্রতিদিন শত শত বালুভর্তি ভারী যানবাহন চলায় সড়কগুলো অল্প দিনেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব যান ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল করায় ঘটছে দুর্ঘটনা। কুষ্টিয়া ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে এসব স্বীকার করে আগামীকে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।

পদ্মা ও গড়াই নদীর কুষ্টিয়া অংশের ২২টি পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করা হয়। বালুমহাল ইজারাদার আব্দুল হান্নান, মহিদুল ইসলাম ও ইয়াসিন আরাফাত তুষারের দেয়া তথ্য যুক্ত করে এ হিসাব পাওয়া গেছে। তারা বলেন, ভাল মানের হওয়ায় এখানকার মোটা এবং ফিলিং বালুর চাহিদা অনেক। আশপাশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়। পদ্মা ও গড়াই নদী থেকে তোলা বালু ট্রাক ও ট্রলিতে করে নদীর বুক থেকে ছোট ছোট সংযোগ সড়কে করে এসে মহাসড়কে যুক্ত হয়। শত শত ট্রাক-ট্রলি চলায় এসব সড়কের অবস্থা একেবারে বেহাল। বেশিরভাগ যানবাহনে বালু কাভার দিয়ে না ঢেকে নেয়ায় বালু পড়ে পুরো রাস্তা সয়লাব হচ্ছে। ভারী বাহনের চাকায় নষ্ট হয়ে গেছে সড়কের পিচ। কোথাও কোথাও রাস্তা দেবে গেছে বিদজনকভাবে। এ অবস্থা কুষ্টিয়া শহরতলীর রানাখড়িয়া-কদমতলা, তালবাড়িয়া, জুগিয়া-বারখাদা-ভাটাপাড়া, হরিপুর সেতু-মন্ডলপাড়া, কুমারখালীর মীর মশাররফ সেতু এলাকা এবং কুমারখালী ও খোকসার বিভিন্ন সংযোগ সড়কের। এরমধ্যে শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুগিয়া- ভাটাপাড়া সড়ক গত ৫ বছরে দুবার পুননির্মাণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত ভার নিয়ে ট্রাক চলাচলের কারণে সড়কটি এখন বেহাল। এ সড়কে চলা ট্রাকের বেশির ভাগই কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মহিদুল ইসলাম ও তার স্বজনদের। এ কারনে ভয়ে কেউ মখ খুলতে পারে না।

পৌরসভার কানাবিল মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক থেকে শুরু হয়ে সড়কটি জুগিয়া হয়ে গড়াই নদীর তীর ঘেঁষে চলে গেছে বারখাদা হাট এলাকায়। এখানে পদ্মা-গড়াইয়ের মোহনা থেকে বালু আগে অবৈধভাবে কেটে নেয়া হতো। চলতি বছরের গোড়ার দিকে এখানকার বালুমহাল ইজারা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। জুগিয়ার এই বালু ঘাটটির ইজারাও পেয়েছেন মহিদুলের লোকজনই। বালুবাহী বড় ড্রাম ট্রাক চলার কারণে সড়কটি কয়েক ফুট দেবে গেছে। বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। রাস্তার ওপরে ও দুপাশে জমে গেছে বালুর স্তুপ। ভাঙ্গা ও চলাচল অনুপযোগী সড়কটি দিয়ে তবুও বালুবাহী ট্রাক চলাচল অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে প্রায় দুই কিলোমিটার দৈর্ঘের এ সড়কের দুই পাশের বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। পাশাপাশি অটোরিকশা, ভ্যান, বাই সাইকেল নিয়ে যারা চলাচলকারীদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। আবার বর্ষাকালে রাস্তায় কাদায় ভরে যায়। বালু মহালের ইজারাদার প্রভাবশালী হওয়ায় নিত্যদিনের এ দুর্ভোগ মুখ বুজে মেনে নিচ্ছেন এলাকবাসি। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হক বলেন, ধুলি বালু কাদা এখন তাদের জীবনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। বাড়ি-ঘরের জানালা দরজা বন্ধ করে থাকতে হয় বেশিরভাগ সময়।’

আরেক বাসিন্দা শাহজাহান আলী বলেন, বালুর ট্রাকের কারণে তাদের ভোগান্তির অন্ত নেই। তার ঘরের একটি আসবাবপত্রও ভালো নেই। ঠিকমত রান্না-খাওয়ারও উপায় নেই।’ এই সড়কটি আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে ছিল। গত বছরে তারা এটি পুননির্মাণ করেছে। কিন্তু ভারি ট্রাক চলাচলের ফলে সড়কটি ফের আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ফাতেমা খাতুন জানান, সারাক্ষণ ধূলা-বালি ওড়ায় ‘বাড়িতে থাকা যায় না। সব সময় পরিস্কার করতে হয়। খাবার খাওয়া যায় ঠিক মত। বাচ্চাদের নানা অসুবিধা হয়। ভ্যান চালক আতাহার জানান,‘ খুব সমস্যা। চলাচল করতে কষ্ট হয়। মুখ খোলা বারন। চাপ আছে।’

জনদুর্ভোগ নিয়ে জানতে চাইলে পৌর কাউন্সিলর মহিদুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘাট। তিনি বলেন, এলাকায় আমিও বাস করি, আমাদের কোন সমস্যা হচ্ছে না। সবাই ভালো আছি।’ তবে বর্তমানে সড়কটি কুষ্টিয়া পৌরসভার অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সড়কটির অবস্থা ভয়াবহ। বালুবাহী ট্রাক সড়কটি একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে আইন থাকলেও তারা রাজনৈতিক কারণে পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। আবার বালু যেহেতু উন্নয়ন কাজে ব্যবহার হয়, সেহেতু বালুর ট্রাক চালাচলও বন্ধ করা সম্ভব নয়। এ কারণে সড়কটিকে কিভাবে টেকসই বানানো যায় সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।’

এদিকে কুষ্টিয়া শহর সংলগ্ন গড়াই নদীর ওপরে শেখ রাসেল সংযোগ সেতু দিয়ে বালু যাচ্ছে ছোট আকারের ট্রলিতে করে। এই সেতুর ওপরে ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। তাই হরিপুর মণ্ডলপাড়ায় নদী থেকে বালু যাচ্ছে স্যালোচালিত এসব ট্রলি করে। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এসব ট্রলি শহরে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে। বালু ঢেকে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও নেয়া হচ্ছে আলগাভাবে। খোলা অবস্থায় বালু পরিবহন করায় সেতু এবং রাস্তার উপরে পড়ে এক ধরনের পিচ্ছিল আবরণ তৈরি করছে। এতে ঘটছে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে বিপাকে পড়ছেন মোটরসাইকেল চালকরা।

যেসব ট্রলিতে করে বালু পরিবহন হচ্ছে তা স্যালো ইঞ্জিন বসিয়ে স্থানীয় প্রযুক্তিতে লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে তৈরি।  এসব ট্রলির চালকেরও নেই লাইসেন্স। কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ এবং কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়কেও চলছে এসব যানবাহন। কুমারখালী ও খোকসা থেকেও বালু নিচ্ছে ট্রলিগুলো।

হরিপুরের বাসিন্দা মো. রফিক বলেন, নিচে সড়কে যেমন বালু পড়ে আছে তেমনি বালু উড়ে চোখে পড়ছে। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।

কুমারখালী বাসস্ট্যান্ডে এসব অবৈধ যানবাহন থেকে ২০ টাকা করে তোলা হয়। পৌরসভার নামে টোকেন দিয়ে টাকা তোলা হয়। কুষ্টিয়ার মহাসড়ক গুলোতে পুলিশ নিজেও টাকা তোলে, তোলে বিভিন্ন দালাল। সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধ এসব ট্রলির সাথে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। এদের বেপরোয়া চলাচলের কারণে অন্য যানবাহনের চালক এবং যাত্রীরা আতঙ্কে রয়েছেন। ভয়ে আছেন রাস্তার পাশের মানুষগুলোও।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে সাংবাদিক জাহিদুজ্জামান কথা বলেন কুষ্টিয়া ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক অলিউজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, পুলিশ মাঝে মধ্যেই এসব যানবাহনের বিপক্ষে অভিযান চালায়, জরিমানা করে। কিন্তু ট্রলি চালকরা গরীব মানুষ তাই ছাড় দেয়া হয় বলেন তিনি। সাংবাদিককে ওলিউজ্জামান বলেন, অবৈধ যানগুলো অগোচরে চলে। তাছাড়া বিভিন্ন মানুষ অনুরোধ করায় যানবাহনগুলো আটক করায় যায় না। লকডাউন শেষে শতভাগ নিয়ম মেনে যানবাহন চলতে দেয়া হবে বলেন তিনি।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কুষ্টিয়া অল্পদিন আগে যোগদান করেছি। তাই এসব যানের কারণে মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি জানা ছিলো না। চলাচল ও অব্যবস্থাপনার কারণে যে সমস্যা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি।

নিচের ভিডিওতে দেখুন টাকা তোলার দৃশ্য।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net